চিকিৎসা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | | NCTB BOOK
2

চিকিৎসাঃ

পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষই সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। অথচ প্রতি বছর জনসংখ্যা ও রোগের জটিলতা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দিতে বিজ্ঞানীরা জীব প্রযুক্তির আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দ্রুত ঔষধ (drugs) শিল্পের উন্নতি ঘটছে। মারাত্মক রোগ ব্যাধি শনাক্তকরণের পাশাপাশি জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওষুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়া জোরালো হয়েছে। নিচে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

১. ভ্যাকসিন উৎপাদন : প্রাণিদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা ব্যবহার করা হয় । আগে প্রাণিদেহ থেকে অ্যান্টিজেন পৃথক করে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হতো । বর্তমানে জিন প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হচ্ছে যা পোলিও, যক্ষ্মা, হাম, বসন্তসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ হচ্ছে।

২. মানব ইনসুলিন উৎপাদনঃ মানুষের ডায়াবেটিক রোগের চিকিৎসায় ইনসুলিন হরমোন ব্যবহার করা হয়। আগে গরু ও শুকরের অগ্ন্যাশয় থেকে বাণিজ্যিকভাবে এ হরমোন সংগ্রহ করা হত। কিন্তু বর্তমানে মানুষের ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিন ব্যাকটেরিয়ায় স্থাপন করে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে এটি যেমন সহজলভ্য হচ্ছে তেমনি এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই ।

৩. মানব গ্রোথ হরমোন উৎপাদন : মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী সোমাটোট্রফিন হরমোন উৎপাদনকারী জিনকৈ ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিডে জুড়ে দিয়ে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে মানব গ্রোথ হরমোন উৎপাদন করা হচ্ছে। এ হরমোন বামনত্ত্ব চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

৪. ইন্টারফেরন উৎপাদন (ইন্টারফেরন এক ধরনের উচ্চ আণবিক ওজন সম্পন্ন প্রোটিন যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেয় । (স্বাভাবিক অবস্থায় ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার দু-একদিনের মধ্যেই মানবদেহের অধিকাংশ কোষ ইন্টারফেরন উৎপন্ন করে। ইন্টারফেরন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। হেপাটাইটিস-এর চিকিৎসায় বর্তমানে E. coli ও ঈস্ট থেকে জিন প্রকৌশল প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারফেরন উৎপাদন করা হচ্ছে। 

৫. বংশগতিয় রোগ নিরাময়ে : মানুষের প্রায় তিন হাজার বংশগতিয় রোগ আছে এসব রোগের কোন চিকিৎসা নেই। যেসব জিন দ্বারা এ সব রোগ সৃষ্টি হয় জিন প্রকৌশল প্রযুক্তি দ্বারা সেসব জিনকে অপসারণ বা প্রতিস্থাপন করে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা চলছে।

৬. গর্ভের শিশু পরীক্ষা : মাতৃগর্ভের শিশু কোন বংশগত বা অন্য কোন অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে কি না তা "ড্রামনিওসিস" নামক জিন প্রযুক্তি দ্বারা নিরূপণ করা যায়।

৭. এনজাইম উৎপাদন : জিন প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রয়োগ করে খাদ্য হজমকারী বিভিন্ন এনজাইম, যেমন-জাইমেজ, প্রোটিয়েজ, লাইপেজ; কৃমিনাশক এনজাইম ফাইসিন ইত্যাদি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।

৮. ট্রান্সজেনিক প্রাণী থেকে ওষুধ আহরণ : ট্রান্সজেনিক প্রাণী - উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রাণিগুলোকে "বায়োরিএক্টর" হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব প্রাণীর দুধ, রক্ত ও মূত্র থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ আহরণ করা হয়। একে মেলিকুলার ফার্মিং বলে।

Content added By
Promotion